মালয়েশিয়ায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা

মালয়েশিয়ায় বাঙালি শ্রমিকদের বর্তমান অবস্থান নিয়ে আমার আলাপ হয় জাকির হোসেনের সঙ্গে। তিনি এখন মালয়েশিয়ার পেরাকপ্রদেশের ‘কামপার’ শহরে একটি ভবনে মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করছেন। তার দেশের বাড়ি পটুয়াখালী থানার গলাচিপা এলাকায়। দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় অবস্থান করে জাকির দেখেছেন এ দেশের কর্মপরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা। তবে আমি যখন এই দেশে প্রথম আসি, তখন কোনো কাজের অভিজ্ঞতা ছিল না। প্রথমে জোগালির কাজ করতাম। এর পর দেয়াল প্লাস্টারিং এবং বর্তমানে মিস্ত্রির কাজ করছি।

মালয়েশিয়ায় কাজের সুযোগ-সুবিধা ভালো। তবে বস ভালো হলে বেতন সময়মতো পাওয়া যায়। অনেক সময় দেখা যায়, খারাপ বসের কারণে ২-৩ মাস পর পর বেতন দেয়া হয়। আবার অনেক সময় বেতন দেয় না। আমার কাজের অভিজ্ঞতা থেকে আমি দেখেছি- এখানকার দাতু আমরা বাংলায় যাকে বলি সাইটপ্রধান, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিশ্বস্ত চীনা দাতু। চীনাদের মধ্যে ৮৫ শতাংশ ভালো। মালয়েশিয়ানরা ১৫ শতাংশ ও ইন্ডিয়ানরা ৫ শতাংশ ভালো।

মালয়েশিয়ায় নিয়োজিত বাংলাদেশি শ্রমিকরা বর্তমানে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছেন। কনস্ট্রাকশন কাজে এই দেশে বাংলাদেশিরা সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছেন। ফোক্লিফ, ক্রেন, বেহু- এসব মেশিনের নিয়ন্ত্রণ আমার সাইটে বাঙালিরা করছেন। এখানকার কাজের পরিবেশ ভালো। তবে মাঝেমধ্যে ইন্দোনেশিয়ানরা আমাদের ওপর জোর জবরদস্তি করে। ইন্ডিয়ানরা অনেক সময়ই আমাদের টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যান। ইন্দোনেশিয়ানরা মালয়েশিয়ার প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় তাদের অত্যাচারের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। তাদের দাতুরাও ভয় পান। কারণ তাদের নিয়ন্ত্রণ করা একটু কঠিন।

প্রথম অবস্থায় আমার দৈনিক আয় ছিল ৩০ রিঙ্গিত। এখন আমি মিস্ত্রির কাজে নিয়োজিত রয়েছি। এখন আমার দৈনিক আয় ৮০ রিঙ্গিত, ওভারটাইমসহ ১০০ রিঙ্গিত। কাজের অভিজ্ঞতা ভালো এবং কাজের মান ভালো হওয়ায় আমার আয় অন্যান্য মিস্ত্রির চেয়ে একটু বেশি। তবে বেতননির্ভর করে কাজের দক্ষতার ওপর, অভিজ্ঞতার ওপর। এখানে অনেক অবৈধ শ্রমিক রয়েছেন, যারা বৈধ হওয়ার জন্য এ দেশের এজেন্টদের টাকা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ না বুঝে ভুয়া এজেন্টের খপ্পরে পড়ে অনেক টাকা খুইয়েছেন। তাই এজেন্টদের বিষয়ে আগে সতর্কতা অবলম্বন করুন। অনেক চীনা, মালাই, ইন্ডিয়ান এজেন্ট তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভিসা করে দিতে পারেনি।

এ ছাড়া আমাদের হাইকমিশনের কাজের পরিসর সীমিত। এই প্রদেশে লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। কিন্তু তারা বাংলাদেশ সরকারের কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। ফলে প্রতিনিয়ত দালাল ও ভুয়া এজেন্টের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন বহু বাঙালি।